বৃষ্টিতেও কমবে না গরমের তীব্রতা


প্রচণ্ড গরমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনজীবন যখন অস্থিরতার চরমে, ঠিক সেই সময় বৃষ্টিতে ভিজল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু জায়গা। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ শুরু হয় ঝড়ো বৃষ্টি। এরপরই মুষলধারে নামে বৃষ্টি। 


সেই বৃষ্টিতে তাপমাত্রা খানিকটা কমলেও সেটি বেশি স্থায়ী হবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গত কয়েক বছরের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বৈশাখ মাসের এই সময় তাপমাত্রা অনেকটা বেশি থাকে এবং এবারও ঠিক তাই। আবার এপ্রিল আসতেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে মানুষের। 


কারণ, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পর গরমের তীব্রতা আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় গরমের ব্যাপ্তি আরও বাড়বে। 


কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৃদু তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে। মাঝারি তাপপ্রবাহে ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে। আর এই তাপপ্রবাহের তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর।


আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, কিছুদিন পর ময়মনসিংহ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খুবই কম। যে বৃষ্টিপাত হবে তাতে গরমের তীব্রতা খুব একটা কমবে না। গরমের তীব্রতা কমার জন্য যে ধরনের বৃষ্টির দরকার, সেটির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ। 


আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত বছরেরও এই সময় (১৬ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল। ওই সময় তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছিল। এবার আগামী সপ্তাহে ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি: বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব বলছে এদিন সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। সোমবার (১৫ এপ্রিল) লোডশেডিং করতে হয়েছে ২৪৫ মেগাওয়াট। 


তবে এর মধ্যে রাজধানীতে কোনো লোডশেডিং ছিল না। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানিয়েছেন, প্রতি বছর এপ্রিলে সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে বিদ্যুতের। এ সময় একদিকে তীব্র গরম থাকে। অন্যদিকে সেচ ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ কারণে এবারও এপ্রিলকে সর্বোচ্চ চাহিদার মাস বলে মনে করছি আমরা। এবার সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারে।


তিনি বলেন, এর আগের বার আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। হয়তো এবার ১৬৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারব। লোডশেডিং হলেও সেটি ৫০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত হতে পারে। হয়তো জ্বালানি সংকটের কারণেই লোডশেডিং করা লাগতে পারে। আর দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এক হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং খুব বেশি নয়।


এই পরিমাণ ঘাটতি হলে তখন হয়তো গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। আবার জ্বালানি সংকটের জন্য সেই উৎপাদন কিছুটা ব্যাহতও হতে পারে। 


রমজানে দেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক মাত্রায় লোডশেডিং দেখা গেছে। এ ব্যাপারে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, এ ধরনের বক্তব্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিছুটা এমন ছিল। 


যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নজরে এসেছে। তিনি বলেছেন, লোডশেডিং করার ক্ষেত্রে সেটি সব জায়গায় যেন সমান হয়। আসলে লোডশেডিংয়ে সবাইকে অল্প অল্প করে বণ্টন করলে তখন সেটি আর কারও বোঝা হবে না। জনজীবন বিপর্যস্ত: দেশের যেসব অঞ্চলে গরমের তীব্রতার কারণে জনজীবন থমকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে, এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগ অন্যতম। 

বিভাগীয় শহরটিতে দিনের অধিকাংশ সময় তাপমাত্রা ৩৭ থকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। আর সেখানে গরমের তীব্রতা অনুভব হচ্ছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন