আমরা যারা শহর থেকে একটু দূরে গ্রামাঞ্চলে থাকি তাদের জন্য সবচেয়ে ভোগান্তির বিষয় হলো ইন্টারনেট। গ্রামের দিকে ইন্টারনেট সুবিধা একেবারে অপ্রতুল। থাকলেও তার গতি এতটাই কম যে কোন কাজ করতে নিলে অনেক অসুবিধায় পরতে হয়। গ্রামের দিকে ইন্টারনেট অপ্রতুলতার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা কারণ হলো অবকাঠামোগত দূর্বলতা।
অবকাঠামোগত দূর্বলতা থাকার কারণে গ্রামের দিকে ইন্টারনেট সুবিধা এখনো ব্যাপকভাবে প্রসার করা সম্ভব হয়নি। এ অসুবিধা কাটিয়ে ওঠার জন্য টেসলা কোম্পানি সিইও ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে যায় নাম হলো স্টারলিংক।
বিজ্ঞান এবং মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী কিন্তু ইলন মাস্ক এর নাম শোনেনি এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুঃস্কর। এই ইলন মাস্ক-ই আমাদের ইন্টারনেটের গতির দুর্দশা কমাতে নতুন একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। এর নাম "স্টারলিংক" প্রজেক্ট! এর বদৌলতে আমরা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বসে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা পেতে পারি।
স্টারলিংক কী?
স্টারলিংক হলো একটি প্রজেক্ট যার মাধ্যমে মহাকাশে লো-অরবিট স্যাটেলাইট পাঠিয়ে এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা হবে। বর্তমানে অবশ্য অনেক কোম্পানি জিও-স্টেশনারী স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সেবা প্রদান করে থাকে। স্টারলিংক এর এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য মহাকাশে প্রায় ৪২,০০০ এর মতো স্যাটেলাইট পাঠানো হবে। তবে এই স্যাটেলাইট গুলো লো-অরবিট স্যাটেলাইট। অর্থাৎ এগুলো পৃথিবীর খুব কাছে থেকে পৃথিবীকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করবে।
জিও স্টেশনারী স্যাটেলাইট গুলো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৮০০ কিলোমিটার উপরে স্থির থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। আর স্টারলিংকের এই লো-অরবিট স্যাটেলাইট গুলো মাত্র ৫৪০ থেকে ৫৭০ কিলোমিটার উপরে থাকবে।
স্টারলিংক প্রজেক্ট এর উদ্দেশ্য কী?
স্টারলিংক প্রজেক্ট এর মূল উদ্দেশ্য হলো গ্লোবাল কানেক্টিভিটি। একইসাথে হাই-স্পিড এবং লো-ল্যাটেন্সি ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নিশ্চিত করাও এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এর ফলে স্টারলিঙ্ক বর্তমানের অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির সাথে সরাসরি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
স্টারলিংক প্রজেক্টের সুবিধা কী?
স্টারলিংক এর স্যাটেলাইট গুলো পুরো পৃথিবীকে জালের মতো ঘিরে ফেলবে এবং এর ফলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোনো জঙ্গলের ভিতর থেকেও উচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাবে। এটি হাই-স্পিড এবং লো ল্যাটেন্সী ইন্টারনেট সেবা প্রদান করবে। এখন আমরা অনেকেই বুঝতে পারছিনা যে এই ল্যাটেন্সী টা আবার কী জিনিস।
ল্যাটেন্সী কী?
ল্যাটেন্সী হচ্ছে একটা ডিভাইসের সাথে আরেকটা ডিভাইসের রেসপন্স করতে কত সময় লাগে তার পরিমাপ। ল্যাটেন্সী কম হলে সার্ভারের সাথে অতি দ্রুত যোগাযোগ করা যায়, একে লো ল্যাটেন্সী বলে। আর ল্যাটেন্সী বেশি হলে সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করতে বেশি সময়। অনলাইন ভিডিও গেইম খেলার সময় লো ল্যাটেন্সী বেশি প্রয়োজন হয়।
স্টারলিংক কীভাবে কাজ করবে?
বর্তমানে কিছু কিছু কোম্পানি ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য জিও-স্টেশনারী স্যাটেলাইট ব্যবহার করে, যা অনেক দূরে থাকে। দূরত্বের জন্য সিগন্যাল যাওয়া-আসা করতে অপেক্ষাকৃত বেশী সময় লাগে। এর ফলে নেটওয়ার্ক স্পিড কমে যায় এবং ল্যাটেন্সী বৃদ্ধি পায়। এই স্টারলিংক প্রজেক্ট এর স্যাটেলাইট গুলো লো-অরবিট স্যাটেলাইট হওয়ায় এগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি থাকবে ফলে সিগন্যাল তাড়াতাড়ি যাবে, নেটওয়ার্ক স্পিড বাড়বে এবং ল্যাটেন্সীও কম থাকবে। আবার, জিও স্টেশনারী স্যাটেলাইট গুলোতে কানেকশনের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার হয়। এতে করে আলো অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করায় এর গতি অনেকটা কমে যায়। অপরদিকে স্টারলিংক স্যাটেলাইট এ ব্যবহৃত হবে লেজার লাইট এবং বায়ু মাধ্যম, ফলে জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইটের মতো এখানে গতি কমে যাবে না। এখানে আলো তার পূর্ণ গতিতে চলতে পারিবে ফলে ডেটা আদান-প্রদানের গতিও বৃদ্ধি পাবে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট এর দাম কত?
বর্তমানে স্টারলিংক এর দুইটা প্যাকেজ রয়েছে। একটার দাম প্রতি মাসে ৯৯ ডলার এবং অন্যটির দাম প্রতি মাসে ৫০০ ডলার। ৯৯ ডলারের প্যাকেজ দিয়ে কেবলমাত্র একটা নির্দিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে ৫০০ ডলারের প্যাকেজ দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাবে।
স্টারলিংক এর সীমাবদ্ধতা কী?
স্টারলিংক স্যাটেলাইট গুলো আকাশকে ঘিরে ফেলায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে সমস্যা হতে পারে। এবং রেডিও সিগন্যাল আদান প্রদানে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন