আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাগজের তৈরি প্রচলিত মুদ্রা বা এ সংশ্লিষ্ট কোন ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত বস্তু ব্যবহার করে থাকি। এসব দিয়ে বাস্তব জীবনে এবং অনলাইনে যে লেনদেন করে থাকি সে সংক্রান্ত বিষয়গুলো আপাত দৃষ্টিতে কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই মিটিয়ে ফেলা যায়। কিন্ত বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড, এটিএম কার্ড, ডেবিট কার্ড অথবা অন্যান্য ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত বস্তুগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে।
ক্রেডিট কার্ড, এটিএম কার্ড, ডেবিট কার্ড অথবা অন্যান্য ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত বিষয়গুলোতে লেনদেনের ক্ষেত্রে সেবা দাতা এবং গ্রহীতা উভয়কেই তৃতীয় কোন পক্ষের উপর ‘ট্রাস্ট’ বা আস্থা রাখতে হয়। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে থাকে। ব্যাংক ব্যবহার করে কোনো লেনদন করা হলে উভয়পক্ষেরই ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হয়।
একই ক্যাশ দুই বা ততোধিক বার ব্যবহার করাকে ডাবল স্পেন্ডিং বলা হয়। ডাবল স্পেন্ডিং যেকোনো যেকোনো ই-ক্যাশ সিস্টেমের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ঢুকে যেতে পারে!
২০০৮ সালে যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় পৃথিবীর সব বড় বড় ব্যাঙ্কগুলি প্রায় পথে বসেছিল তখন সরকার বা তৃতীয় পক্ষের নিরাপত্তা খুব কাজে আসছিল না। তৃতীয় পক্ষ বা সরকারের উপর যখন বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পরে, তখন জনমনে হতাশা নেমে আসে!
উপরের এইসব সমস্যাকে সমাধান করার উদ্যেশ্যে ২০০৯ সালে ৯ পৃষ্ঠার “Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System” নামক এক গবেষণা প্রস্তাবনা অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। এই গবেষণাটি প্রকাশ করেন সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে এক বা একাধিক কম্পিউটার বিজ্ঞানী। যেখানে বিটকয়েন সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় যে, একজন অন্যজনকে কোন তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কাছে না গিয়েই লেনদেন সম্পন্ন করতে এবং ‘ডাবল স্পেন্ডিং রোধ করতে একটি পিয়ার-টু-পিয়ার (peer-to-peer) ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা পরিশোধের ব্যবস্থা প্রয়োজন।
‘মাইনিং’ হচ্ছে যে পদ্ধতিতে এই কারেন্সি বা বিটকয়েন তৈরি করা হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সাতোশি সর্বপ্রথম বিটকয়েন মুদ্রা রিলিজ করে। এই সাতোশি নাকামোতোর আসল পরিচয় আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারে নি। ২০০৯ সালে কিছু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মুক্ত উৎস প্রযুক্তিতে তৈরী করে ফেলেন পৃথিবীর প্রথম ক্রিপ্টোগ্রাফিক কারেন্সি বিটকয়েন। যা কোন সরকারের অধীনে নয় এবং এটি কোনো দেশের সীমানা মানে না। যার কাছে এই কারেন্সি রয়েছে তারাই এর মালিক।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি কী?
ব্লকচেইন হলো কেন্দ্রিকতা বিহীন, বিভাজিত এবং সাধারণ ডিজিটাল তথ্যভান্ডার। ব্লকচেইন বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে লেনদেন রেকর্ড করতে ব্যবহৃত হয়। ব্লকচেইন প্রযুক্তিটি ইন্টারনেটের মতো বা তারচেয়েও বেশী সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?
ব্লকচেইনে পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। ফলে এসব কারেন্সির ট্রানজেকশন বা লেনদেন সেবা দাতা ও গ্রহিতার ‘ওয়ালেট’ থেকে ‘ওয়ালেটে’ সম্পন্ন হয়। কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয় না। ব্লকচেইনে সর্বপ্রথম ট্রানজেকশনের হিসাব থেকে এখন পর্যন্ত ঘটা সব হিসাব সংরক্ষিত আছে এবং এ ডাটাবেইজ নিয়মিতভাবে আপডেট হচ্ছে। যে পদ্ধদিতে এইসব নথিপত্র ভবিষ্যতের জন্য জমা করা হয় তাকে লেজার বলে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন