Ami Poramanob pdf download - আমি পরামানব বইটি জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর নতুন বই। এটি একটি সাইন্স ফিকশন উপন্যাস। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সাইন্স ফিকশন লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি অনেক কিশোর উপন্যাস রচনা করেছেন। তিনি শিশু-কিশোরদের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। এবারের ২০২২ এ সাইন্স ফিকশন উপন্যাস আমি পরামানব বইটি প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশনী। ২০২১ সালে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমার ডেঞ্জারাস মামী সহ অপারেশন নীলাঞ্জনা, বন বালিকা, যেটুকু টুনটুনি সেটুকু ছোটাচ্চু বই গুলো প্রকাশ করেছে।
দেখে নিনঃ
বইয়ের নামঃ আমি পরামানব
লেখকঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
আমি পরামানব বইটি পৃথিবীর একটা খারাপ সময়কে নিয়ে লেখা হয়েছে। যখন পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ এক দুইজন মানুষের হাতে কেন্দিভূত। তারা তাদের বিশাল সম্পদ নিয়ে কী করবে সেটা জানে না। তারা মানুষের ভূমিকায় না থেকে ঈশ্বর হতে চায়। এইজন্য তারা নতুন প্রজাতির অতিমানব জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করে। একই সাথে প্রকৃতি তাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তৈরি করে পরামানব। এই পরামানব কে নিয়েই আমি পরামানব সাইন্স ফিকশন টি লেখা হয়েছে।
Ami Poramanob বইয়ের কিছু অংশ
কয়দিন থেকে আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে । মাঝে মাঝেই এটা ঘটে, আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে । কখনো কখনো নিজেই সেই প্রশ্নের উত্তর বের করে ফেলি তবে বেশিরভাগ সময় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। এবারেও প্রশ্নটা বেশ কয়েকদিন থেকে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু উত্তরটা খুঁজে পাচ্ছি না।
প্রশ্নটা আমার কাজ নিয়ে । কমি একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করি, একেবারে খুবই সাধারণ শ্রমিকের কাজ। ভোরবেলা গিয়ে আমি আমার জায়গায় দাড়াই। আমার সামনে : একটা কনভেয়ার বেল্ট যেতে থাকে। প্রতি তিন মিনিটে সেই কনভেয়ার বেন্ট দিয়ে একটা বিদদুটে যন্ত্র এসে আমার সামনে হাজির হয়। আমার তখন বেঞ্চ দিয়ে তার একটা বোল্ট টাইট করতে হয়। তারপর যন্ত্রটা উল্টে একটা স্কু খুলতে হয়; খোলার পর একটা গর্ত বের হয়ে আসে, সেই গর্তে লাল রঙের একটা ছোট টিউব ঠেসে ঢুকাতে হয়। তারপর আবার স্ক্রটা লাগিয়ে একটা হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে দিতে হয়।
এর জন্য আমার বরাদ্দ সময় তিন মিনিট। তিন মিনিটে যদি পুরো কাজটুকু শেষ করতে না পারি তাহলে আমার পয়েন্ট কাটা যায়। পয়েন্ট কাটা গেলে সপ্তাহ শেষে আমার ইউনিট কমে যায়। অল্প কয়টা ইউনিট দিয়ে আমি অনেক কষ্টে দিন কাটাই তাই ইউনিট কমে গেলে আমার খুব অসুবিধা হয়। প্রথম প্রথম তিন মিনিটে পুরো কাজ শেষ করতে পারতাম না, আজকাল অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে মাঝে মাঝে বিদঘুটে যন্্রটা উল্টো হয়ে আসে কিংবা বাকা হয়ে আসে বলে সেটাকে আগে সোজা করে নিতে হয় তখন আমার মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
আমার প্রশ্নটা খুবই সহজ । আমি যে কাজটা করি এটা খুব সহজেই একটা যন্ত্র করে ফেলতে পারে । আজকাল যন্ত্র চিন্তা ভাবনা পর্যন্ত করতে পারে, তাদের নাকি বৃদ্ধিমত্তাও আছে। শুনেছি তাদের বুদ্ধি নাকি অনেক সময়েই মানুষ থেকে বেশি । তাহলে এই কাজটা একটা যন্ত্রকে দিয়ে না করিয়ে আমার মত একজন মানুষকে দিয়ে কেন করাচ্ছে? শুধু আমি একা না আমার মত আরো অনেক হতভাগা শ্রমিক দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এই বুদ্ধিহীন কাজ করে যাচ্ছে। আমার ফ্যাক্টরির মালিক কেন এই কাজটা আমাদের দিয়ে করাচ্ছে? আমি প্রশ্নটা নিয়ে কয়েকদিন থেভকী-ভাবছি, তার কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না।
আমরা যখন কাজ করি প্রতি দুই ঘণ্টা পর আমাদের দশ মিনিটের ছুটি দেওয়া হয়। আমরা সবাই এই ছুটিটার জন্য পাগলের মত অপেক্ষা করি। ক্যাফেটরিয়ায় গিয়ে আমি আমরা চা কফি না হয় জুস খাই। এগুলো ফ্রি কোনো ইউনিট খরচ করতে হয় না তাই দরকার না থাকলেও বেশ কয়েক মগ খেয়ে ফেলি। সেখানে অন্য শ্রমিকদের সাথে তখন আমি একটু কথাবার্তা বলি। আমি এরকম একজন শ্রমিককে আমার প্রশ্নটা করেছিলাম, তাকে দেখে আমার বেশ চালাক চতুর মনে হয়েছিল। কিন্তু কথা বলে বুঝতে পারলাম মানুষটা আমার মতই বোকা । কে জানে হয়তো আমার থেকেও বোকা।
প্রশ্নটা শুনে কিছুক্ষণ সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল, “তুমি কি চাও এখানে যন্ত্র লাগিয়ে তোমাকে বেকার বানিয়ে ফেলুক? আর তুমি কাজকর্ম ছাড়া রাস্তায় রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াও!” আমি তাকে কী প্রশ্ন করেছি আর সে তার কী উত্তর দিয়েছে! তাকে এই প্রশ্নটা করে অবশ্য আমার একটা লাভ হয়েছে, আমি বুঝতে পেরেছি মানুষের চেহারা চালাক চতুর হলেই সে চালাক চতুর হয় না। আমার চেহারায় বুদ্ধির কোনো ছাপ নেই, আমি মানুষটাও খুবই সাধারণ | লেখাপড়া করার সুযোগ পাইনি, অনাথ আশ্রমে যারা বড় হয় তারা লেখাপড়ার সুযোগ পায় না। আমার বাবা মায়ের সাথে কোনোদিন দেখা হবে না, দেখা হলে জিজ্ঞেস করতাম আমাকে যদি অনাথ আশ্রমেই দিয়ে দেবে তাহলে আমায় জন্ম দিল কেন? আমার জন্ম না হলে এই পৃথিবীর কী ক্ষতি হতো?
আমি ক্যাফেটরিয়ায় বসে বসে ফ্রি জুস খেতে খেতে পুতুলের মত দেখতে মেয়েটাকে লক্ষ্য করি । এই মেয়েটি এখানে একেবারে বেমানান, তার আরো কোনো ভালো জায়গায় থাকার কথা । দেখে মনে হয় মেয়েটার মনে কোনো এক ধরনের দুঃখ আছে । আমি মেয়েটার সাথে এক দুইদিন ভাব করার চেষ্টা করেছি, কোনো হয়নি। এখন আমাকে দেখলে না দেখার ভান করে সরে যায় ! আমিঙ য মেয়েটাকে কোনো দোষ দেই না, কেন মেয়েটি আমার কাছে আসবে? আমি অশিক্ষিত শ্রমিক, আমার চেহারাও ভালো না, চেহারার মাঝে বুদ্ধিমত্তার ছাপ নেই । অনাথ আশ্রমে অন্য অনাথ ছেলেমেয়েদের মার খেয়ে খেয়ে অপমান সহ্য করতে করতে বড় হয়েছি। কোনোদিন আমার কোনো মেয়ে বন্ধু ছিল না, মেয়েদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় আমি জানি না । শুধু মেয়েদের সাথে কেন, অপরিচিত মানুষের সাথেও কথা বলতে পারি না। আমার নিজেরই অবাক লাগে, আমার জন্ময়েছে কেন আর আমি এত কষ্ট করে বেঁচে আছি কেন? মাঝে মাঝে আমি কল্পনা করি হঠাৎ কোনোদিন কোনোভাবে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ হয়ে যাব কীভাবে সেটা হবে আমি জানি না । তবু আমি কল্পনা করি, কল্পনা করতে তো কোনো দোষ নেই।
আমি দ্বিতীয় মগ জুস খেতে খেতে শুনতে পেলাম কাজে ফিরে যাওয়ার বেল বেজেছে। আমি জুসটা গলায় ঢেলে আমার জায়গায় হাজির হলাম।
নোটঃ কপিরাইটের কারণে বইটি Ami Poramanob pdf ডাউনলোড নাও হতে পারে। সাময়িক এই সমস্যার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। alert-warning
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন