Amar Dangerous Mami pdf download - আমার ডেঞ্জারাস মামী বইটি জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর নতুন বই। এটি একটি কিশোর উপন্যাস। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সাইন্স ফিকশন লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি অনেক কিশোর উপন্যাস রচনা করেছেন। তিনি শিশু-কিশোরদের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। এবারের ২০২১ এ কিশোর উপন্যাস আমার ডেঞ্জারাস মামী বইটি প্রকাশ করেছে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী। ২০২১ সালে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমার ডেঞ্জারাস মামী সহ অপারেশন নীলাঞ্জনা, বন বালিকা, যেটুকু টুনটুনি সেটুকু ছোটাচ্চু বই গুলো প্রকাশ করেছে।
দেখে নিনঃ
বইয়ের নামঃ আমার ডেঞ্জারাস মামী
লেখকঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
আমার ডেঞ্জারাস মামী বইটি টুলুর মামীর কাহীনি নিয়ে লেখা হয়েছে। টুলু বড় হয়ে যে কাজ গুলো করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল টুলুর নীরা মামী তার সবগুলো করেছেন। পাহাড়ে গিয়েছেন, সমুদ্রে গিয়েছেন, প্লেন থেকে লাফ দিয়েছেন, কারাতে শিখেছেন, সিনেমায় অ্যাকটিং করেছেন, আন্দোলন করেছেন, জেলে গিয়েছেন, পুলিশের মার খেয়েছেন। সোজা কথায় এমন কোনো কাজ নেই যেটা নীরা মামী করেন নাই। আরো যে কয়েকটা বাকী ছিল এখন মনে হয় সেগুলোও করে ফেলেছেন। এই সব ঘটনা গুলো নিয়েই লেখা হয়েছে আমার ডেঞ্জারাস মামী বইটি।
Amar Dangerous Mami বইয়ের কিছু অংশ
বিভীষিকা
হ্যা, এক শব্দে যদি কেউ আমার জীবনটাকে ব্যাখ্যা করতে চায় তাহলে সেই শব্দটা হবে বিভীষিকা । কেউ যেন মনে না করে আমার চারপাশে যারা আছে তারা বুঝি সবাই মিলে আমার জীবনটাকে বিভীষিকাময় করে রেখেছে, মোটেও সেরকম কিছু নয়। বরং উলটোটাই সত্যি আমার বাসার সবাই, স্কুলের বন্ধু-বান্ধব (এক দুজন রাক্ষসী টাইপ স্যার ম্যাডাম ছাড়া), অন্য সব স্যার ম্যাডাম সবাই খুবই ভালো সত্যি কথা বলতে কী, আমিই একটু পাজী টাইপের, ইচ্ছা না থাকলেও কীভাবে জানি একটার পর একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলি। কিন্ত তারপরেও আমার নিজের কাছে মনে হয় আমার জীবনটা একটা মূর্তিমান বিভীষিকা।
আমাদের বাসায় আছেন আব্বু, আম্মু, বড় বোন মিলা, আমি টুলু আর ছোটো ভাই পিলু। আব্বুকে দিয়ে শুরু করা যাক। আব্বু হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভুলোভালা মানুষ। এরকম একজন মানুষ কেমন করে কলেজে প্রফেসর হতে পারেন আমি সেটা চিন্তা করেও পাই না। আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় আব্বু নিশ্চয়ই মাঝেমধ্যে ভুলভাল কলেজে গিয়ে ভুলভাল ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে চলে আসেন। পড়ানও নিশ্চয়ই ভুলভাল জিনিস কিন্তু আজকালকার ছাত্রছাত্রীরা সেটা মনে হয় বুঝতেও পারে না। আব্বুর কাজকর্ম দেখে আম্মু মাঝে মাঝেই মাথা নেড়ে বলেন, “আমার সাথে বিয়ে না হলে তোমার যে কী হতো!”
কথাটা মনে হয় সত্যি, তাই আব্বু কেমন যেন বাচ্চা মানুষের মতো মাথা নেড়ে হাসেন, তারপরে বলেন, “ঠিকই বলেছ। তুমি আমাকে বিয়ে করেছিলে বলেই টিকে আছি।”
আম্মু বলেন, “আমি তোমাকে বিয়ে না করলে অবশ্য তোমার কোনোদিন বিয়েই হতো না। কোন মেয়ের মাথা খারাপ হয়েছে যে তোমাকে বিয়ে করবে?”
“আব্বু কোনো কথা না বলে আবার মাথা নাড়েন আর হাসেন। আমার সন্দেহ হয় যে আম্মু কী বলেছেন আব্বু এর মাঝে সেটাও নিশ্চয়ই ভুলে গেছেন। যাই হোক, এখন কথা হচ্ছে এরকম ভুলোভালা একজন মানুষ আমার জীবনে বিভীষিকা হয় কেমন করে?
সেটার অনেক কারণ আছে একটা হচ্ছে আমার স্কুল। আমার নতুন স্কুলটা একটা ঢংয়ের স্কুল, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েই তাদের শাস্তি নাই, ঢং করার জন্য তাদের মাঝে মাঝেই ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়েদের সাথে কথা বলতে হয়। যারা নেকু নেকু টাইপের আঠা আঠা ভালো স্কুলে তাদের ছেলেমেয়েরা কত ভালো করছে তখন তারা মহাখুশী হয়ে ফিরে আসেন। ঝামেলাটা হয় আমার মতো দুই চারজনের-যাদের লেখাপড়ার কোনো ইচ্ছা নাই, ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সাথেও যারা মাঝেমধ্যে একটু মারামারি করে, যাদের ক্রিকেট বল. জানালার কাচ ভেঙে যায়, যারা লাইব্রেরির বই হারিয়ে ফেলে এক্রকম্ ছেলেমেয়েদের। আমি চেষ্টা করি আব্বুকে নিয়ে যেতে, আম্মু যদি সব অপকর্মের কথা জেনে যায় তাহলে পরে বিপদ হতে পারে ।
শেষবার যখন আব্বুকে নিয়ে গেছি তখন জিনিয়া ম্যাডাম কাগজপত্র দেখে আব্বুকে বললেন, “আপনার ছেলের মনে হয় ডিসিপ্লিন নিয়ে একটু সমস্যা আছে।”
আব্বুর কথাটা বুঝতে একটু সময় লাগল, তারপর বুঝলেন ভুলভাবে । আব্বু হা হা করে হাসার চেষ্টা করে বললেন, “কার নাই? ইংরেজি ল্যাংগুয়েজটাই একটা সমস্যা। ডিসিপ্লিন শব্দটার মাঝে এস এর পর বাড়তি একটা সি দেওয়ার দরকার কী? মাঝে মাঝে আমারই প্যাচ লেগে যায়। তারপর ধরেন নিমোনিয়া শব্দটা”
জিনিয়া ম্যাডাম মুখ শক্ত করে বললেন, “না, আমি বানান নিয়ে কথা বলছি না। আমি বলছি ডিসিপ্রিন ব্যাপারটা নিয়ে । আমার কাছে বিশাল লিস্ট”
আব্বু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন । মনে হয় বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে তার ছেলের ডিসিপ্রিন নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে।
জিনিয়া ম্যাডাম মুখটাকে রাক্ষুসীর মতো করে বললেন, “মনে হয় লেখাপড়াতেও মন নেই। সব সাবজেক্টে টেনেটুনে পাশ । গণিতের অবস্থা ভয়াবহ।”
আমি না শোনার ভান করে গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার বাম হাতের কেনে আঙুলটা পরীক্ষা করতে লাগলাম । শুনলাম রাক্ষুসী ম্যাডাম বলছেন, “এই যে গণিত পরীক্ষার খাতাটা এখানে আছে। প্রশ্ন করা আছে যতজন শ্রমিক তত টাকা মজুরি হিসেবে এত টাকা দেওয়া হয়েছে, শ্রমিকদের মজুরি কত। আপনার ছেলে কী লিখেছে জানেন?"
আমি শুনলাম আবু দুর্বল গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “কী লিখেছে?”
সে লিখেছে, “শ্রমিকদের যথেষ্ট মজুরি দেওয়া হয় নাই। এটি অন্যায় এবং অমানবিক। এটি একধরনের শোষণ ।” রাক্ষুসী ম্যাডাম একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “শোষণ বানানটা ভুল ।"
আমি চোখের কোনা দিয়ে আব্বুর মুখের দিকে তাকালাম, দেখলাম তার ঠোটের কোনায় এক চিলতে হাসি। আব্বু মনে হলো অনেক কষ্ট করে তার হাসিটা গোপন করে জিজ্ঞেস করলেন, “এই উত্তর লিখে সে কত পেয়েছে?”
রাক্ষুসী ম্যাডাম আবার একটা ফেলে বলেন, “মাইনাস টেন।”
আব্বু বললেন, “ভুল তো শূন্য দিলেই হতো ।”
আমি মাথা নেড়ে আব্বুর করব কিনা বুঝতে পারলাম না, শেষ পর্যন্ত না শোনার ভান করে পরের আঙুলটা পরীক্ষা করতে লাগলাম । যখন বাসায় আসছি তখন আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, “আব্বু তুমি কি আমার ওপর রাগ হয়েছ?”
“রাগ? কেন?” মনে হলো আব্বু এর মাঝে সবকিছু ভুলে গেছেন।
আমি বললাম, “এই যে পরীক্ষায় কম নম্বর পাচ্ছি। স্যার ম্যাডামরা রাগ । আমার ডিসিপ্লিন নিয়ে সমস্যা।”
আব্বু বললেন, “ও আচ্ছা! সেই ব্যাপার? বুঝতে পারছি না রাগ হব নাকি অবাক হব। কীদব না হাসব।” দরকার নাই খুশী হওয়ারও দরকার নাই, হাসারও দরকার নাই কাঁদারও দরকার নাই।”
“তাহলে?” ........
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন